ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাতের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশের প্রান্তভাগে বসবাসরত মেঘালয়ের উপজাতীয় গ্রামবাসীরা ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছে, সরকার যদি তাদের জন্য সব ঋতুতে ব্যবহার করার মতো রাস্তা নির্মাণ করে দিতে না পারে, তবে তাদের চারটি গ্রাম ও এর অধিবাসীদের যেন বাংলাদেশকে দিয়ে দেয়া হয়।
হিংগড়িয়া, হুরোই, লেহালিন ও তেজরি গ্রামের আদিবাসীরা অনেক বছর ধরেই রামবাই-বাতাও-বোরখাত-সোনাপুর রাস্তাটি নির্মাণের দাবিতে নয়া দিল্লি ও শিলংয়ে ছোটাছুটি করে কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা সফল হতে পারেনি।
অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় থাকা রাস্তার কারণে এসব গ্রামের সাধারণ মানুষকে মারাত্মক ভোগান্তিতে থাকতে হচ্ছে। এমনকি এসব গ্রামের লোকদের মূল অস্তিত্বই এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এই চার গ্রাম ইস্ট জৈন্তিয়া হিলস ডিস্ট্রিক্টের অধীনে। স্থানটি মেঘালয়ের রাজধানী শিলং থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ভালো রাস্তা, মোবাইল সংযোগ ও যথার্থ চিকিৎসা সুবিধার অনুপস্থিতির কারণে এসব গ্রামে বসবাসরত ৫ হাজারের বেশি মানুষকে কঠিন জীবনযাপন করতে হচ্ছে। সীমান্তবর্তী এসব গ্রামের প্রতি ভারত সরকারের আগ্রহ না থাকায় এসব গ্রামের লোকজনকে বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়।
চার গ্রামের মুখপাত্র কিনজাইমন আমসে বলেন, সরকারের কাছে সীমান্তবর্তী মানুষের জীবনের কোনোই মূল্য নেই। তাদের দরকার কেবল ভোটের। সরকার যদি সত্যিই আমাদেরকে ভারতীয় বলে গণ্য করে, আমাদের সমস্যাদির ব্যাপারে আন্তরিক হয়, তবে সরকারের উচিত দ্রুত রাস্তার সমস্যা সমাধান করা এবং সমস্যা সহজ করার জন্য অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তা করা না হলে লোকজনের চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।
তিনি বলেন, এসব গ্রামের লোকজন হতাশ ও ক্লান্ত। উপজাতীয় লোকজন সম্প্রতি এক বৈঠকে বসে তাদের দুর্দশা, কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করে। তারা মনে করে যে তাদের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সরকার আন্তরিক নয়। গ্রাম দরবারের ওই সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে সরকার যদি আমাদের জন্য রাস্তা নির্মাণ করতে না পারে, তবে সরকারের জন্য ভালো হয়, এই চার গ্রাম ও এর ৫ হাজার অধিবাসীকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়া।
তিনি বলেন, এই চার গ্রামের লোকজন বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি লিখে আমাদের জন্য রাস্তা নির্মাণের অনুরোধ করবে। কারণ ভারত ও মেঘালয় সরকার আমাদের সমস্যাটি বুঝতে অক্ষম। আমসে উল্লেখ করেন, বিশ্ব হয়তো প্রথমবারের মতো লকডাউনের মুখে পড়েছে। কিন্তু এই চার সীমান্ত গ্রাম শুরু থেকেই লকডাউনে আছে। কারণ তারা রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন, যোগাযোগের কোনো সুবিধা নেই।
তিনি বলেন, রাস্তা না থাকায় রোগীদের সময়মতো হাসপাতালে নেয়া যায় না। খবর পাওয়া যায়, লোকজন চিকিৎসার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসব গ্রামের কৃষকেরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে আছে। তারা তাদের পণ্য বাজারে নিতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। তারা ন্যূনতম মূল্যে তাদের ফসল বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন।
তিনি আরো বলেন, এসব গ্রামের লোকজনের প্রায় সব সমস্যার মূলে রয়েছে রাস্তা না থাকা। আমরা বিশ্বাস করি, রাস্তা নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এসব গ্রামে কোনো উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি হবে না।
রাস্তা নির্মাণের জন্য বিভিন্ন মহলে ছোটাছুটির কথা প্রকাশ করতে গিয়ে আমসে বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের বলতে গেলে কোনো আগ্রহই নেই। আমরা ডেপুটি গভর্নর, মুখ্যমন্ত্রী, গভর্নর- সবার কাছে চিঠি লিখেছি। কিন্তু পেয়েছি কেবল মিথ্যা আশ্বাস। আমরা পিএমও, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নীতি আয়োগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিল, কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য অফিসে চিঠি লেখে হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। কিন্তু আমাদের প্রয়োজনের ব্যাপারে তাদের কারো কোনো আগ্রহ নেই। Source এফপিএসজে রিভিউ
সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর