মানুষ যে দুর্বল ও অসহায়, তা আবারও প্রমাণিত হল। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস দ্বারা মানবজাতি হুমকির মুখে। কে কখন আক্রান্ত হয়, সেই চিন্তায় বিশ্ব মানব তটস্থ। দৈনিক হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর সংবাদ আসছে সংবাদ মাধ্যমে। সুপার পাওয়ার ও স্বাস্থ্যসেবায় উন্নত তকমাধারীসহ কাউকেই ভাইরাস তোয়াক্কা করেনি। আস্তিক-নাস্তিক, মুসলিম-অমুসলিম, পাপী-পাপমুক্ত কাউকেই সে আলাদা করেনি। এ বিষয়ে যারা ইতোপূর্বে নানা বক্তব্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল, সেসব ইসলামের আলোকে যথাযথ ছিল না। বাস্তবেও যে তা সত্য নয়, এটা প্রমাণ হলো।

মহামারি থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বন করতে গিয়ে বিশ্বে লকডাউন নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। ‘জান বাঁচানো ফরজ’ বলে সমাজে প্রচলিত বচনটি অমূলক নয়। এটি কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত। আলোচ্য নিবন্ধে এ বিষয়ে আলোচনা উদ্দেশ্য নয়। আজকের আলোচনা করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটকালে আমাদের করণীয় সম্পর্কে।

অভাব গ্রস্তকেকে আহার দান
মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় শ্রমজীবী, পেশাজীবী, কৃষিজীবী ও দিন মজুর ইত্যাদি সব শ্রেণির মানুষের আয়-উপার্জন বন্ধ। এমতাবস্থায় এক শ্রেণির মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন যাপন করছে। বিত্তশালী, কল-কারখানার মালিক ও সরকারি আধা সরকারি কিংবা প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে চাকুরিরতদের জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম। এর বাইরে হাতেগোণা কিছু মানুষ ছাড়া সাধারণ মানুষের জীবন আজ বিপন্ন। অভাব অনটনের খড়গ এদের ওপর দিয়ে যাচ্ছে।

দেশ ও সমাজ অভাব-অনটনের সম্মুখীন হলে সচ্ছল মানুষদের কর্তব্য হলো- অসহায়-অসচ্ছলদের প্রতি দানের হাত প্রসারিত করা। মহান আল্লাহ সেই সব মুমিনের প্রশংসা করেছেন যারা দুর্দিনে অভাবি মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে আর বিপদের কঠিন মুহূর্তে ধৈর্যধারণের পরামর্শ দেয়। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘অথবা দুর্ভিক্ষের দিনে অন্নদান, এতিম আত্মীয়কে, অথবা ধূলি-ধূসরিত মিসকিনকে, অতঃপর তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া, যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে উপদেশ দেয় সবরের ও উপদেশ দেয় দয়ার। তারাই সৌভাগ্যশালী।’ –সূরা বালাদ: ১৪-১৮

অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে উৎসাহ না দিয়ে এবং এতিমকে অবমূল্যায়ন করে যারা সম্পদের মোহে বিভোর থাকে আল্লাহতায়ালা তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘না, কখন্ও নয়; বরং তোমরা এতিমকে সম্মান করো না, অভাবগ্রস্তদেরকে খাদ্যদানে পরস্পরকে উৎসাহিত করো না, উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য সম্পদ সম্পূর্ণরূপে খেয়ে ফেল, ধনসম্পদ অতিশয় ভালোবাসো- তা সংগত নয়।’ –সূরা ফাজর: ১৭-২১