আল্লাহতায়ালার অফুরন্ত নিয়ামতরাজির মধ্যে সময় হচ্ছে অন্যতম। এই সময় হতে এক ঘণ্টা বা এক মিনিট চলে যাওয়া মানে প্রকৃত পক্ষে জীবনের একটা মূল্যবান অংশ কমে যাওয়া। এ কারণে সময়ের যথাযথ ব্যবহার একান্ত অপরিহার্য। মানুষ তার দুনিয়ার জীবন কীভাবে অতিবাহিত করেছে আখেরাতে সে হিসাব দিতে হবে।

সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- কোনো এক ব্যক্তিকে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপদেশ দেওয়ার সময় বললেন, তুমি পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দাও। ১. বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবনকে গুরুত্ব দাও, ২. অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে গুরুত্ব দাও, ৩. দারিদ্রতা আসার আগে সচ্ছলতাকে গুরুত্ব দাও, ৪. ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করো এবং ৫. মৃত্যু আসার আগে জীবনের গুরুত্ব দাও।’ –মুসতাদরাক: ৭৮৪৬

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে অনেকবার সময়ের শপথ করেছেন। একজন মুসলমান যাতে সময়ের মূল্য যথাযথভাবে বুঝতে পারে এ জন্য কোরআনে একটি সূরা নাজিল করা হয়েছে ‘আসর’ বা সময় নামে। ওই সূরার শুরুতে আল্লাহতায়ালা সময়ে কসম খেয়েছেন। এর দ্বারা সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।

ইসলামের অধিকাংশ ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে সময়ের গুরুত্ব বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কেননা ইসলামের সব ইবাদতই সময়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত- শুরু ও শেষ হিসেবে। বরং ইবাদত সহিহ-শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সময়কে নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য সময়ানুবর্তিতাকে শর্ত দিয়ে সময়ের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে যেমন আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর যখন তোমরা নামাজ সম্পন্ন করো, তখন দণ্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করো। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামাজ ঠিক করে পড়ো। নিশ্চয় নামাজ মুসলমানদের ওপর ফরজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।’ –সূরা আন নিসা: ১০৩

নামাজ যা দ্বীনের খুঁটি, রাত দিনকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে এর ওয়াক্ত নির্ধারিত সময় ও নির্দিষ্ট আলামতে করা হয়েছে। ইসলামের অন্যান্য রোকন- রোজার রয়েছে বাৎসরিক নির্ধারিত সময়। জাকাতের হিসাবের জন্য নির্ধারিত সময় ধর্তব্য, হজের বিষয়েও একই কথা। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কিংবা সময় হিসাব করেই ইবাদত-বন্দেগি পালন করার হুকুমের মধ্য দিয়ে আল্লাহতায়ালা সময়ের গুরুত্ব শিখিয়েছেন।

এর পরও মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে কমবেশি সময় নষ্ট করার প্রবণতা রয়েছে। সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার ও সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছি। দিনরাত সব মানুষের ক্ষেত্রে সমান। পার্থক্য শুধু এখানে, কারও সময়ের মধ্যে বরকত আছে। কারও সময়ের মধ্যে বরকত নেই। এই যে আমরা বলি, ‘সময় কোন দিক দিয়ে যায়’ এটা হলো- সময়ের বরকতীনতার কারণে। আবার অনেকে বলেনম, ‘সময় যাচ্ছে না কেন? সময় কাটছে না কেন?’-এটা কখনও হয় চিন্তার অবস্থা কিংবা দুঃখ-কষ্টের অবস্থার কারণে। এ ধরনের অবস্থা ছাড়া কখনও মনে হয়, সময় দ্রুত শেষ হয়ে গেল। কখনও মনে হয় সময় ফুরায় না। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সময়ের বরকত নষ্ট করে এমন কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে আমরা সময় নষ্ট করে থাকি। এর ফলে জীবনের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হচ্ছি। গুরুত্বপূর্ণ কাজ কোনো কারণ ছাড়াই পরে করবো বলে ফেলে রাখছি, অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি করে সময় নষ্ট করছি, অপ্রয়োজনের মোবাইলে চ্যাট করে ও গেম খেলে সময় নষ্ট করছি, গান-বাজনা শোনে ও নাটক, সিনেমা, খেলা ইত্যাদি দেখে সময় নষ্ট করছি, মারাত্মক বদভ্যাস পরনিন্দা ও গুজব ছড়িয়ে সময় নষ্ট করছি। এভাবে সময় নষ্ট করার প্রচুর উদাহরণ দেওয়া যাবে।

অথচ এই সময়টুককে কল্যাণকর কিংবা সৃজনশীল কাজে ব্যয় করা যেত। সময়ের সদ্ব্যবহার আর উৎপাদমুখী ভাবনা ও সৃজনশীল কর্ম ছাড়া জীবনে সফলতা আসবে না। আর পরকালে মুক্তি তো অসম্ভব।

মানুষ হিসেবে আমার উচিৎ হলো- সময় নষ্ট করার বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করা। জীবন ও প্রাত্যহিক কাজকর্মের প্রতি নিজের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া। আল্লাহতাআলা আমাদেরকে পর্যবেক্ষণ করছেন। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত, তার পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে আমাদের বিবেচক হওয়া এবং তাকে স্মরণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করা। আমরা যদি আল্লাহকে ভয় করি এবং সর্বক্ষেত্রে তার সম্পর্কে সচেতন হয়ে জীবনযাপন করি, তাহলে আমরা আমাদের সময়ের ব্যাপারেও দায়িত্বশীল হবো এবং এর সদ্ব্যবহার করবো।