প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট ‘কোভিড-১৯’ রোগকে এখন বৈশ্বিক মহামারি বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসে আক্রন্তের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি মানুষের।

মানুষ থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় সে বিষয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে সাধারণ কিছু সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

১. গণপরিবহন

গণপরিবহন এড়িয়ে চলা কিংবা সতর্কতার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাস, ট্রেন কিংবা অন্য যে কোন ধরণের পরিবহনের হাতল কিংবা আসনে করোনাভাইরাস থাকতে পারে। সেজন্য যেকোনো পরিবহনে চলাফেরার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা এবং সেখান থেকে নেমে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

২. কর্মক্ষেত্র

অফিসে একই ডেস্ক এবং কম্পিউটার ব্যবহার করলেও ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাঁচি-কাশি থেকে করোনাভাইরাস ছড়ায়। যেকোনো জায়গায় করোনাভাইরাস কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েকদিন পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। অফিসের ডেস্কে বসার আগে কম্পিউটার, কিবোর্ড এবং মাউস পরিষ্কার করে নিন।

৩. জনসমাগমস্থল

যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় সেসব স্থান এড়িয়ে চলা কিংবা বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে খেলাধুলার স্থান, সিনেমা হল থেকে শুরু করে ধর্মীয় স্থানও রয়েছে।

৪. ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যখন গ্রাহকরা যায় তখন অনেকেই একটি কলম ব্যবহার করেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি সে কলম ব্যবহার করে তাহলে পরবর্তী ব্যবহারকারীদেরও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সেজন্য নিজের কলম আলাদা করে রাখতে পারেন। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে।

এছাড়া টাকা উত্তোলনের জন্য যে এটিএম বুথ ব্যবহার করা হয়, সেখান থেকেও সংক্রমণ হতে পারে। কারণ এটিএম বুথের বাটন অনেকে ব্যবহার করে।

৫. লিফট

ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে আরেকটি জায়গা হতে পারে বাড়ি কিংবা অফিসের লিফট। লিফট ব্যবহারের সময় নির্ধারিত ফ্লোরে যাবার জন্য লিফটের বাটন অনেকে ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন অফিস ভবনে প্রতিদিন শত-শত মানুষ লিফট ব্যবহার করছেন। এদের মধ্যে কেউ যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থাকেন এবং সে লিফটের বাটনে অন্যদের আঙ্গুল গেলেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।

৬. টাকা-পয়সা

ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরনের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করার ঘটনা নতুন নয়। এমনকি ব্যাংক নোটের মাধ্যমে সংক্রামক নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার কথাও বলেন বিশেষজ্ঞরা।

গতমাসে ভাইরাসের উপস্থিতি নিয়ে টাকা বা ব্যাংক নোট জীবাণুমুক্ত করার একটি উদ্যোগ দেখা যায় চীনে। দেশটিতে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সেখানে ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে বাজার থেকে ব্যাংক নোট সরিয়ে নিয়ে তা আবার জীবাণুমুক্ত করে বাজারে ছাড়ে দেশটি।

বিশেষজ্ঞরা ব্যাংক নোট এড়িয়ে স্পর্শবিহীন মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেনাকাটা বা লেনদেন করার পরামর্শ দিয়েছেন। খবর বিবিসি বাংলা।

৭. শুভেচ্ছা বিনিময়

করমর্দন এবং কোলাকুলির মাধ্যমেও করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। আপনি যে ব্যক্তির সাথে কোলাকুলি এবং করমর্দন করছেন, তিনি যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তাহলে সেটি অন্যের দেহে সংক্রমিত হতে পারে। এজন্য করমর্দন এবং কোলাকুলির না করার জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবকিছুর মূল কথা হচ্ছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা। হাত না ধুয়ে নিজের মুখমণ্ডল স্পর্শ করবেন না। এটি হলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য নিয়মিত ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে করছেন করছেন বিশেষজ্ঞরা।