একটু বেশি হাঁটাচলা করলেই সমস্যাটা টের পাচ্ছিলেন অনন্যা। শুরুতে গুরুত্ব না-দিলেও, ধীরে ধীরে কোমরের নীচ থেকে যখন ক্রমেই অবশ হতে শুরু করল, তখন ভয় পেয়ে পরিচিত অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে ছোটেন বছর চব্বিশের মডেল। এক্স-রে, এমআরআইয়ের পর ধরা পড়ে শিরদাঁড়ার স্নায়ুতে চাপ পড়ছে তরুণীর। কারণ খুঁজতে গিয়ে ধরা পড়ে রোগের কারণ, হাইহিলের অতিরিক্ত ব্যবহার।
হাই-হিলকে মহিমান্বিত করে হিট বলিউডি গানের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। এমনকী ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরাও বলে থাকেন হাই-হিল নাকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় আত্মবিশ্বাস। কিন্তু অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্যরকম বিপদের কথাই। জুতোর মতো ছোট্ট জিনিসটির দিকে নজর না-দিলে বিপদ বাধতে পারে একাধিক। কোমরে, পিঠে-পায়ে ব্যথা তো বটেই, হতে পারে অস্থিঘটিত এবং স্নায়ুর জটিল রোগও।
ফ্যাশনরক্ষাই হোক বা দৌড়ঝাঁপ কিংবা নিদেনপক্ষে প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহার-জুতোর মতো অপরিহার্য বোধহয় কিছুই নেই৷ তবু তার দিকে নজর দিতে বড়ই অনীহা৷ অনেকেই মনে করেন, দামি জুতো হলেই কেল্লাফতে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন জুতো দামি হলেই হবে না। তার হিলের উচ্চতা এবং গঠনের উপরই নির্ভর করছে সবটা। ঘটনা হল, হিল বেশি উঁচু হলে শরীর নিজের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কিছু পরিবর্তন করে দাঁড়ানোর কায়দায়। শিরদাঁড়ার স্বাভাবিক ‘S’ গড়ন বিঘ্নিত হয় তখনই। চাপ পড়ে নিতম্ব, পিঠ, পায়ের পেশি এবং সর্বোপরি হাঁটুর উপর। অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ কিরণ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘হাইহিল বেশি পরলে শরীরের ওজন বণ্টনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। পায়ের পাতার উপর চাপ বাড়ে।’
অল্প সময়ের জন্য শরীর এই তারতম্য সয়ে নিলেও, সমস্যা বাড়ে নিয়মিত হাইহিল পরতে থাকলে। পরিসংখ্যান বলছে, ৭২% মহিলা তাঁদের জীবদ্দশার কোনও না কোনও সময়ে হাইহিল পরেন। তাঁদের একটা বড় অংশ বিশেষ অনুষ্ঠানের সময়েই কেবল হাইহিল পরলেও, অনেকেই নিয়মিত স্টিলেটোর মতো জুতো পরে থাকেন। ওজনের বণ্টন ঠিকমতো না হওয়ায় অধিকাংশ সময়েই পড়ে গিয়ে বিপদ বাধানোর সম্ভাবনা থাকে তাঁদের ক্ষেত্রে। সম্প্রতি মেলানিয়া ট্রাম্পের ভারত সফরের সময় সবরমতী আশ্রমে যাওয়ার আগে এমনই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। আশ্রমের মাটি-কাঁকর বিছনো রাস্তায় স্টিলেটো পড়ে ফার্স্ট লেডি হাঁটতে পারবেন কি না, তা ভেবেই চিন্তায় পড়েছিলেন মার্কিন দূতাবাসের কর্মীরা।
ঘটনা হল, পা মচকে পড়ে গিয়ে গোড়ালির হাড়ে চোট লাগার তালিকায় প্রথম বিশ্বের মহিলা নাগরিকরা উপরের দিকে থাকলেও, বিশেষ পিছিয়ে নেই ভারতীয়রাও। হাড় না ভাঙলেও অধিকাংশ মহিলা যাঁরা দীর্ঘ ক্ষণ হাইহিল পরে থাকেন, তাঁরা ভুগছেন কাফ মাসেলে যন্ত্রণা, লো ব্যাক পেন এবং পায়ের পাতায় যন্ত্রণা নিয়ে। কাফ মাসেলের উপর বেশি জোর পড়তে থাকলে গোড়ালির পিছনের দিকে টেন্ডো অ্যাকাইলিসের মতো সমস্যাও দেখা দিচ্ছে অনেকের। এমনকী শিরদাঁড়ার আকার বদলে যাওয়ায় ফোরামিনাল স্টেনোসিসের মতো রোগও দেখা দেয়। খুব টাইট অথবা ছুঁচোলো মুখের জুতো পরলে, অনেক সময়ে পায়ের পাতার হাড়ের মধ্যে স্নায়ুগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রবল যন্ত্রণারও শিকার হন অনেকে। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম, মর্টনস নিউরোমা৷ ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে অনেক সময় এই রোগে আক্রান্তদের অস্ত্রোপচারও করতে হয়৷
এমতাবস্থায় কী করণীয়? কিরণ বলেন, ‘হিলের উচ্চতা ইঞ্চির তিন চতুর্থাংশ অথবা এক ইঞ্চির বেশি না হওয়াই বাঞ্চনীয়।’ অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ দেবব্রত কুমার বলেন, ‘হিলের উচ্চতা নির্দিষ্ট করা এবং পায়ের নিয়মিত ব্যায়াম করা আবশ্যিক। আর কোনও সমস্যা টের পেলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শই দেব আমি।