অবস্থান নিচ্ছে।
“বহিরাগত কোনো পক্ষ যদি এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়, তাহলে তা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দমন করা হবে। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”
পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে গত মে মাসে মজুরি বোর্ড গঠন করে সরকার। বোর্ড মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি।
শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা দাবি করলেও পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন তা বর্তমানের চেয়ে ৬০০ টাকা বাড়িয়ে ৩ হাজার ৬০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
মজুরি এই দাবির মধ্যে গত শনিবার থেকে রাজধানী, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে পোশাক শ্রমিকরা রাজপথে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে, যা থেকে ভাংচুরও হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “মজুরি বোর্ডের রোয়েদাদ নভেম্বরের শেষে পাওয়া যাবে। যতদিন পর্যন্ত রোয়েদাদ না পাওয়া যায়, ততদিন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো ধরনের প্রতিবাদ উত্থাপন করা কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা কারোর পক্ষেই যাবে না।
“আজ যদি পোশাক শিল্প বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এটা যেভাবে মালিকের স্বার্থ বিঘ্নিত করবে, তেমনি শ্রমিকের স্বার্থেরও ক্ষতি করবে। কাজেই রোয়েদাদ ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করাই সবার জন্য উচিত হবে।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মান্নান কচি, সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, বিটিএমএ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামীন উপস্থিত ছিলেন।
নৌমন্ত্রী ও গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শাজহান খানসহ শ্রমিক প্রতিনিধি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন বৈঠকে।
নিরাপত্তা দাবি শিল্প মালিকদের
ভাংচুরের হাত থেকে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পকে রক্ষা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কারখানা মালিকরা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় কারখানায় ভাংচুর করা হচ্ছে। রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমনকি কারখানার ডে-কেয়ার সেন্টারও ভাংচুর করা হয়েছে।
“এটা কখনোই একজন শ্রমিক করতে পারে না। আমরা মনে করি, এসব কার্যক্রমে শ্রমিকদের বাইরেও একাধিক পক্ষ সম্পৃক্ত। আমরা ফ্যাক্টরি চালু রাখতে চাই। এজন্য সরকারের কাছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চেয়েছি।”
তিনি বলেন, “শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরির কথা বলে যে আন্দোলন করছে, সে বিষয়ে আমাদের (মালিকদের) বক্তব্য স্পষ্ট। সরকার গঠিত মজুরি বোর্ড যে বেতন-ভাতা ঘোষণা করবে, আমরা তা বাস্তবায়ন করব।”
বৈঠকে অংশ নেয়া শ্রমিক প্রতিনিধি শামীমা নাসরীন ন্যায্য মজুরির পাশাপাশি শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধের দাবি জানান। তিনি বলেন, এই দুটো সমস্যার সমাধান হলে অসন্তোষ থাকবে না।
“বিভিন্ন কারখানায় অহেতুক ছাঁটাই হচ্ছে। আবার এক কারখানা শ্রমিক ছাটাই করে তাদের ছবি অন্য কারখানায় দিচ্ছে, যাতে ওইসব শ্রমিকের কোথাও চাকরি না হয়। আমরা ভালো পরিবেশে, ন্যায্য মজুরিতে কাজ করতে চাই।”
শ্রম প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আগে বিকালে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। এই বৈঠকে প্রায় অর্ধশত শ্রমিক নেতা অংশ নেন।
দাবি আদায়ে আন্দোলন করলেও ভাংচুর না করতে শ্রমিকদের প্রতি আহ্বান জানান মন্নুজান সুফিয়ান।
“কারখানা ভাংচুর করা যাবে না। শ্রমিকরা শ্রম আইন অনুযায়ী দাবি করবে, যে দাবি বাস্তবায়নে সরকার শ্রমিকদের পাশে আছে।”
বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সাধারণ শ্রমিকদের বোঝানোর জন্য শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী।