সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিসিক। ওই প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিসিকের আওতাধীন ৭৪টি শিল্পনগরে এখন চার হাজার ৪৭০টি শিল্পকারখানা আছে। বর্তমানে বন্ধ আছে ২৮৩টি শিল্পকারখানা। এসব শিল্পনগরের কোন কোন শিল্পকারখানা পরিবেশ দূষণ করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে বিসিক। বছর দেড়েক আগে পরিবেশ দূষণকারী ১৫৫টি শিল্পকারখানা খুঁজে পান বিসিকের কর্মকর্তারা। এসব কারখানায় জরুরিভিত্তিতে ইটিপি নির্মাণ প্রয়োজন—এমন মত দিয়ে তখন থেকেই সেসব শিল্পকারখানার উদ্যোক্তাদের চিঠি দিয়ে ইটিপি নির্মাণ করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত ৭৯টি শিল্পকারখানায় ইটিপি নির্মাণ করা হয়েছে।
বিসিকের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শিল্পকারখানার মালিকদের নিয়মিত লিখিত ও মৌখিকভাবে ইটিপি করার জন্য বলে যাচ্ছি। উদ্যোক্তাদের আমরা এমনও বলছি যে ইটিপি নির্মাণ না হলে আপনার কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। কারণ ইটিপি না থাকায় এসব কারখানা পরিবেশ দূষণ করছে। সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের আয়ুও কমে যাচ্ছে।’
শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, যেসব শিল্পকারখানায় ইটিপি নেই সেগুলোতে আগামী এক বছরের মধ্যে ইটিপি স্থাপন এবং যেসব কারখানায় ইটিপির নির্মাণকাজ চলছে সেগুলো আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনাপত্র জারি করতে সব আঞ্চলিক পরিচালককে অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এসব শিল্পকারখানার করা পরিবেশ দূষণ শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাবে।
দূষণকারী শিল্পকারখানা: বিসিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে বিসিকের আওতাধীন শিল্পনগরগুলোর ৩৭টি শিল্পকারখানা পরিবেশ দূষণ করছে। এগুলোতে ইটিপি নেই। এর মধ্যে ২৭টি কারখানায় এখনো ইটিপি স্থাপনই করা হয়নি। নয়টি কারখানার ইটিপির নির্মাণকাজ চলছে। আর চালু হওয়ার পর বন্ধ হয়ে গেছে একটি কারখানার ইটিপি।
ঢাকা বিভাগে আবার বেশি দূষণ হচ্ছে টঙ্গী শিল্পনগরে। এখানকার ১৩টি কারখানাতে ইটিপি নেই। আর গাজীপুরের কোনাবাড়িতে ১০টি শিল্পকারখানায় ইটিপি স্থাপন করা জরুরি হলেও সেখানে ইটিপি স্থাপনের পর্যাপ্ত জায়গা নেই।
চট্টগ্রাম বিভাগে বিসিকের আওতাধীন শিল্পনগরগুলোর ৩৬টি শিল্পকারখানা ইটিপি না থাকায় পরিবেশ দূষণ করছে। এর মধ্যে ২৯টি কারখানায় এখনো ইটিপি স্থাপনই করা হয়নি। তিনটি কারখানার ইটিপির নির্মাণকাজ চলছে। আর চালু হওয়ার পর বন্ধ হয়ে গেছে চারটি কারখানার ইটিপি।
রাজশাহী বিভাগের তিনটি শিল্পকারখানায় ইটিপি প্রয়োজন বলে চিহ্নিত করে বিসিক। এর মধ্যে দুটি কারখানারই ইটিপি নেই। নির্মাণকাজও শুরু করেননি কারখানার মালিকেরা।
খুলনা বিভাগে বিসিকের আওতাধীন পাঁচটি শিল্পকারখানা পরিবেশ দূষণ করছে। এগুলোতে কোনো ইটিপি নেই। একটি শিল্পকারখানার ইটিপির নির্মাণকাজ করছে। খুলনা ও সাতক্ষীরা শিল্পনগরের ১৫টি শিল্পকারখানায় এখনো সনাতন (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতে বর্জ্য পরিশোধন করা হয়। যশোর শিল্পনগরের আটটি শিল্পকারখানায় চিমনির মাধ্যমে ধোয়া অপসারণ করা হয়।
বিসিকের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বর্জ্য পরিশোধনকারী শিল্প উদ্যোক্তাদের স্বয়ংক্রিয় ইটিপি স্থাপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা-ও তদারক করা হচ্ছে।
চালু ইটিপি কতটুকু সচল: বিসিকের তথ্য, ৭৯টি শিল্পকারখানায় ইটিপি নির্মাণ হয়ে গেছে। তবে যেসব শিল্পকারখানায় ইটিপি চালু আছে সেগুলোর মালিকেরা প্রতিদিন তা চালু রাখেন না বলে অভিযোগ আছে।
শিল্প মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে এক বৈঠক করে ইটিপি আছে—এমন শিল্প ইউনিটগুলো নিয়মিতভাবে প্রতিদিন ইটিপি চালাচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে বিসিককে নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে যেসব কারখানার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে সেগুলোতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত ইটিপি স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেয়। ওই বৈঠকে বিসিক শিল্পনগরে ইটিপি ছাড়া নতুন কোনো ডাইং ও ওয়াশিং প্লান্ট স্থাপনের অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।
বিসিকের প্রতিবেদনে চালু ইটিপিগুলোর কার্যকারিতা পরিবেশ অধিদপ্তরের মানদণ্ড অনুযায়ী পরীক্ষা করে ফলাফল মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জরুরিভিত্তিতে ইটিপি স্থাপন কার্যক্রম তদারক করতে একটি প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে বলেও প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিসিকের চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, ‘ক্রমাগত চাপ দেওয়ার কারণেই উদ্যোক্তারা তাঁদের শিল্পকারখানায় ইটিপি নির্মাণ করেছেন। এসব ইটিপি ঠিকমতো চালু রাখছেন কি না তা আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। পরিবেশের স্বার্থেই বিসিক এটি করে যাচ্ছে।’